মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৭:৩৫ অপরাহ্ন
বাংলা নিউজডে ডেস্ক : দুই দিনের ব্যবধানে সিঙ্গাপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো হাউসের স্ট্রং রুমে (মূল্যবান গুদাম) ৪ চালানে আসে ৬৪ কেজি স্বর্ণ।
গত শুক্রবার বাংলাদেশ বিমানের বিজি০৮৫ নম্বর ফ্লাইটে স্বর্ণ বোঝাই একটি কাঠের বাক্সে এক চালান আসে বিনা ভাড়ায়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যন্ত্রাংশের (এয়ার পার্টস সিল টেইলর) ঘোষণা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক ডেপুটি ম্যানেজারের (ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা) নামে আসা এই বাক্সে ছিল ১৫ কেজি স্বর্ণ। অথচ ওই বাক্সে কোনো যন্ত্রাংশই ছিল না।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি০৮৫ ফ্লাইটের মাধ্যমে পরদিন কাঠের বাক্সে বাকি ৩ চালান আসে রাজধানীর খিলক্ষেতের ফিউচার ট্রেডিং করপোরেশনের নামে। এই চালানগুলো আসে ভারী কাচের ঘোষণায়।
৬৪ কেজি ওজনের বিশাল এই স্বর্ণের চালান জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টমস হাউস। এ ঘটনায় ঢাকা কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন বাদী হয়ে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা করেন গতকাল রবিবার। এতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ফিউচার ট্রেডিং করপোরেশনকে আসামি করা হয়েছে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, গত শনিবার রাতে জব্দ করা চারটি কাঠের বাক্সেই অভিনব পন্থায় স্বর্ণগুলো রাখা ছিল একই কায়দায়। বাক্সের ভেতরে প্রথম স্তরে ছিল পুরু কেরোসিন কাঠের ঘেরা দেওয়া তক্তা। পরের স্তরে পুরু কাচের মধ্যে স্বর্ণের একটি বারের সাইজে খোদাই করা স্থানে এঁটে দেওয়া হয় এক একটি বার।
বিমানের যন্ত্রাংশের নামে আসা স্বর্ণবোঝাই বাক্সটিসহ কার্গো হাউসের স্ট্রং রুমে থাকা ৬৪ কেজি স্বর্ণ বোঝাই ৪ বাক্স হেফাজতে নিতে দারুণ বেগ পেতে হয় কাস্টমস কর্মকর্তাদের। দফায় দফায় ৭ ঘণ্টা চেষ্টা চালানো ছাড়াও বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠিও দেয় সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু গড়িমসি করে বিমান কর্তৃপক্ষ।
অবশেষে বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে গত শনিবার পৃথক সেই ৪ চালান তল্লাশি করে মেলে ৬৪ কেজি ওজনের ৬৪০ পিস স্বর্ণবার। প্রায় ৩২ কোটি টাকা মূল্যের এই স্বর্ণের চালান বিমানবন্দরে কারা আনল, এর সঙ্গে জড়িত কারা জানতে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা।
তবে গতকাল রবিবার রাত পর্যন্ত ৬৪ কেজি স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত সন্দেহে কাউকে আটক করতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
প্রাথমিক তদন্তের পর শুল্ক গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, পৃথক চার চালানে ৬৪০ পিস স্বর্ণবার আনা হলেও সিন্ডিকেট একটি। আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে বিমানবন্দরের অসাধু একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। চক্রটি যৌথভাবে এর আগেও একাধিক স্বর্ণের চালান পাচার করেছে।
চালান জব্দকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সংশ্লিষ্টদের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে গোয়েন্দাদের বদ্ধমূল ধারণা বিমানেরও একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত এই স্বর্ণ পাচারে। স্বর্ণগুলোর প্রকৃত আমদানিকারকের খোঁজে মাঠে কাজ করছেন গোয়েন্দারা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (অভিযান) নুর মোহাম্মদ জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় কোনো ব্যক্তি নয়, আসামি করা হয়েছে সরকারি ও বেসকারি দুটি প্রতিষ্ঠানকে। এখনো এই স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এই চোরাচালানের সঙ্গে বড় সিন্ডিকেট জড়িত। তদন্ত শেষে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে পাচারের উদ্দেশ্যে আনা বিশাল স্বর্ণের চালানের মূলহোতাদের চিহ্নিত করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করছে বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের কমিটিতে থাকছেনÑ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ঢাকা কাস্টমস হাউস ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা।
এনবিআরের সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, স্বর্ণের চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ছাড়াও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর পৃথকভাবে তদন্ত করবে। বিমান মন্ত্রণালয় নাম চাইলে আমরা তার তালিকা দেব। সূত্র : আমাদের সময়
আমেরিকা, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সর্বশেষ খবরের জন্য বাংলা নিউজডের ওয়েবসাইটে আসুন এবং আমাদের Bangla Newsday ফেসবুক পৃষ্ঠাটি সাবস্ক্রাইব করুন।